ওজোন স্তরের স্থূলতা কোন সূচকে মাপা হয় ? ওজোন স্তর ধ্বংসের cfc এর ভূমিকা ?

এই 'বিজ্ঞান-লেখ' এর আলোচ্য বিষয় ওজোন স্তর কী ? ওজোন স্তরের স্থূলতা কোন সূচকে মাপা হয় ? ওজোন স্তর ধ্বংসের cfc এর ভূমিকা ?

স্ট্যাটোস্ফিয়ারের নিম্নাঞ্চলে,ভূপৃষ্ঠের ওপর 15 km থেকে 35 km উচ্চতা পর্যন্ত ওজোন গ্যাস দ্বারা পূর্ণ যে বায়ুস্তর রয়েছে, তাকে ওজোন স্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার বলে। বায়ুমন্ডলের মোট ওজোনের 90% এই স্তরে বিদ্যমান।

ওজোন স্তর বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে অবস্থিত ?


উঃ ওজোন স্তর বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে অবস্থিত-বায়ুমন্ডলের স্ট্যাটোস্ফিয়ার ওজোন স্তর (Ozone Layer) রয়েছে।


ওজোন স্তরের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছেঃ ওজোন স্তর কিভাবে সৃষ্টি হয়


ওজোন স্তর কিভাবে সৃষ্টি হয়-

স্ট্যাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত অক্সিজেন অণু সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে অক্সিজেন পরমাণুতে বিয়োজিত হয়। এই পারমাণবিক অক্সিজেন, আণবিক অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজোন অণু গঠন করে।

O₂ -----> O + O   ,     O₂ + O -----> O₃


ওজোন অণুও অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে অক্সিজেন অণুতে পরিণত হয়।

O₃ -------> O₂ + O


স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তরে এই দুটি বিপরীত প্রক্রিয়া (ওজোন অণুর উৎপাদন ও বিয়োজন) চক্রাকারে চলতে থাকে এবং একটি গতিশীল সাম্যের সৃষ্টি হয়। ফলে স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন গ্যাসের পরিমাণ স্থির থাকে।


ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব মাপক একক / ওজোন স্তরের স্থূলতা কোন সূচকে মাপা হয় ?


উঃ ওজোন স্তরের ঘনত্ব কোন এককে মাপা হয়-
ডবসন(D) এককে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব মাপা হয়।
ডবসন সূচকে ওজোন স্তরের স্থূলতা মাপা হয়।

ওজোন স্তরের স্থূলতা কোন সূচকে মাপা হয়

পরিবেশে Ozone Starer ভূমিকাঃ


সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির বেশির ভাগ অংশ এই স্তরেই শোষিত হয়, কারণ এই রশ্মি ওজোনের উৎপাদন ও বিয়োজনে ব্যয়িত হয়। ওজোন স্তর না থাকলে ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ু এত উত্তপ্ত হত যে স্থল ও জলভাগের সমস্ত জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ত।


এছাড়াও অতিবেগুনি রশ্মি মানুষের ত্বকে ক্যানসার সৃষ্টি করে, কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও অসময়ে ছানি পড়ে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় ও বিভিন্ন জিনঘটিত রোগের সৃষ্টি হয়।



ওজোন স্তরের ক্ষয় : ওজোন গহ্বর সৃষ্টি


স্ট্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোন স্তর পাতলা হওয়ার এই ঘটনাকে ওজোন স্তরের ক্ষয় বা ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহ্বর বা Ozone hole বলা হয়।

বিজ্ঞানী জো ফোরম্যান ( Jo Foreman ) সর্বপ্রথম এটি লক্ষ করেন।


Ozone Star ক্ষয়ে দায়ী গ্যাসগুলিঃ


1.ক্লোরোফ্লুরোকার্বন(CFC) বা ফ্রেয়ন


নাম

বানিজ্যিক নাম ও সংকেত

 

ট্রাইক্লোরোফ্লুরোমিথেন

CFC-11 / CFCl₃

ডাইক্লোরোডাইফ্লুরোমিথেন

CFC-12 / CF₂Cl₂


2.হ্যালোকার্বন বা হ্যালেন যেমন-CF₂BrCl(ব্রোমোক্লোরোডাইফ্লুরোমিথেন), CF₃Br (ব্রোমোট্রাইফ্লুরোমিথেন)


3.নাইট্রোজেনের অক্সাইড যেমন-NO(নাইট্রাস অক্সাইড), N₂O(নাইট্রিক অক্সাইড)


ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণ

বা,ওজোন স্তর ধ্বংসের cfc অথবা no এর ভূমিকা আলোচনা করো


ওজোন স্তর ধ্বংসের cfc অথবা no এর ভূমিকা আলোচনা করো বা ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণ-


উঃ(A) ওজোনের বিয়োজনে NO এর ভূমিকাঃ


স্ট্র‍্যাটোস্ফিয়ারে নাইট্রোজেন অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধিপে লে (দ্রুতগামী বিমান,জেট প্লেন থেকে নির্গত) ওজোনস্তরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওজোন অনু নাইট্রোজেনের ক্সাইডগুলির সঙ্গে বিক্রিয়ায় অক্সিজেন অনুতে পরিণত হয়।


(i) NO↑ + O₃↑-----------> NO₂↑ + O₂↑

(ii) O₂ + UV Ray −−−−> O + O

(iii) NO₂ + O −−−−> NO + O₂

(iv) NO₂↑ + O₃↑ −−−−> NO₃ ↑+ O₂↑


(B)ওজোন স্তর ধ্বংসের cfc এর ভূমিকা


ওজোন স্তর ধ্বংসের cfc এর ভূমিকা হল-


সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি, বায়ুর মধ্যে থাকা ক্লোরো ফ্লুরো কার্বনকে বিয়োজিত করে অতি সক্রিয় পারমাণবিক ক্লোরিন(Cl) মূলক উৎপন্ন করে মূলত এটিই ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।


CF₂Cl₂↑ + UV Ray −−−−> CF₂Cl↑ + Cl


এই উৎপন্ন পারমাণবিক ক্লোরিন ওজোন স্তরের ওজোন গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্লোরিন মনোক্সাইড(ClO) উৎপন্ন করে ।

Cl + O₃ ↑−−−−> ClO + O₂↑


উৎপন্ন ক্লোরিন মনোক্সাইড আবার ওজোন গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে পারমাণবিক ক্লোরিন উৎপন্ন করে ।

ClO + O₃↑ −−−−> Cl + 2O₂↑


উৎপন্ন সক্রিয় ক্লোরিন আবার ওজোনে সাথে বিক্রিয়ায় ClO উৎপন্ন করে এবং বিক্রিয়া গুলি চক্রাকারে চলতে থাকে ।


ওজোন স্তর ধ্বংসের ক্ষতিকর প্রভাব গুলি লেখোঃ


উঃ (a) মানুষের ওপর প্রভাবঃ

[i] চামড়ার ক্যানসার, মেলানােমা হতে পারে ।

[ii] চোখে ছানি পড়তে পারে ।

[iii] চামড়া পুড়ে রং তামাটে হয়ে যেতে পারে ।

[iv] প্রজনন ক্ষমতা ও রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।


(b) উদ্ভিদের ওপর প্রভাবঃ

[i] সালােক সংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে ফলে শস্যের

উৎপাদন কমে যাবে ।

[ii] পাতা বিবর্ণ হয়ে যাবে ।

[iii] বীজে রঅঙ্কুরােদ্গম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে ।


(c) বারিমন্ডলের ওপর প্রভাবঃ

সমুদ্রেফাইটো প্ল্যাঙ্কটনের সালােকসংশ্লে ষ প্রক্রিয়া লক্ষণীয় ভাবে কমে যাবে , ফলে যে সব সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী ফাইটো প্ল্যাঙ্কটন খেয়ে জীবনধারণ করে তাদের বিনাশ ঘটবে ।


(d) জলবায়ুর ওপর প্রভাবঃ

UV রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে পৃষ্ঠে পড়লে ভূপৃষ্ঠে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে,জলাশয়ের জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যাবে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটবে ।


ওজোন স্তরকে রক্ষা করার জন্য কয়েকটি উপায়ঃ


ওজোন স্তর কে রক্ষা করার জন্য সর্বপ্রথম 1987 খ্রিস্টাব্দে মন্ট্রিল প্রোটোকল (Montreal Protocol) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং তাতে নিম্নলিখিত উপায়গুলি বলা হয় —

  • CFC এবং হ্যালনসমূহের ব্যবহার ধাপে ধাপে কমিয়ে 50% -এ নিয়ে আসতে হবে। 

  • CFC -এর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

  • প্লাস্টিক শিল্পে, রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পে, রঞ্জক শিল্পে পরিবেশ আইন কঠিনভাবে প্রয়োগ করা দরকার।

  • রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবিত AGENDA-21 কর্মসূচি সব দেশেকে মেনে চলতে হবে।

  • ওজোন হোল সৃষ্টি এবং তার কু- প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।


ওজোন স্তর নিয়ে আমার এই তথ্যবহুল আর্টিকেলটি আশাকরী আপনাদের ভালো লাগলো। ওজোন স্তর বিষয়ে আপনাদের জানা আর কোনো তথ্য থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন